এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে নানু বাড়িতে বেড়াতে এলাম, নানুরা আর্থিকভাবে তেমন একটা স্বচ্ছল নয়, টিনের দোচালা একটা ঘর। তাই প্রাকৃতিক কাজ সারানোর জন্য ও ঘরের বাইরের দিকটাই যেতে হয়। রাত ঠিক তিনটা আমার প্রচন্ড প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল, কাউকে কিছু না বলে একা একা উঠলাম, এ নিয়ে এতো রাতে কাউকে জাগালেও একটা লজ্জায় পড়ে যাবো। যতই হোক এখন আর ছোট নেই, এবার এইচএসসি দিবো। তাই আর কাউকে না বলেই দরজা মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে দরজা পর্যন্ত গেলাম, কিন্তু বের হতে আর সাহস পাচ্ছি না। মনের মধ্যে হঠাৎ ভূতের ভয় হতে শুরু করল। কিন্তু আমি সায়েন্স এর ছাত্র হওয়ায় ব্যাপারটাকে গ্রাহ্য করতে চাইলাম না, কিন্তু যতই হোক, একেবারে তো আর দূর করা যায় না ভয়টাকে,ছোট বেলার এক জনপ্রিয় পত্রিকার কথাও মনে পরে গেল। সেখানে বলেছিল আইনস্টাইন নাকি তার সূত্রে ভূতের কথা বলেছেন। আইনস্টাইন বললে মিথ্যা হওয়ার কথা নয়৷ ভয় গেল আরো বেড়ে। এই যখন আমার অবস্থা তখনই মনে পড়লো সায়েন্স বী’র কথা! ওখানে তো ভূত নিয়ে আর্টিকেল দেখেছিলাম। আইনস্টাইন ভূত নিয়ে কী বলেছেন সেটা ওখানে ব্যাখ্যা করা আছে! মরবোই যখন ওটা পড়েই না হয় মরি। যেই ভাবা সেই কাজ। বসে গেলাম পড়তে৷ সেখানে কী লেখা ছিল জানেন? দাঁড়ান আপনাদেরকেও পড়ে শোনাই-
অনেকেই ভূতের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ দেখানোর কথা বললে বলেন যে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানেই নাকি ভূতের অস্তিত্বের কথা লেখা আছে৷ সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অনেকে এটা দাবি করেন যে স্বয়ং আইনস্টাইন নাকি তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রের মাধ্যমে ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। বিভিন্ন প্যারানরমাল গ্রুপে সদস্যরা যারা ভূত ধরার কাজ করে বেড়ান তারা ভূতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে আইনস্টাইনের সহায়তা নিয়ে থাকেন। এরকম একজন একটা উদাহরণ যদি দিতে হয় তাহলে আমরা ভূত গবেষক জন কাচুবারের কথা বলতে পারি। তিনি ২০০৭ সালে ‘ঘোস্ট হান্টার‘ বইয়ে বলেন- আইনস্টাইনের মতে শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস থাকে না বরং এক রূপ থেকে কেবল অন্য রূপেই পরিবর্তন করা যায়। তাহলে আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের শরীরের সেই শক্তি কোথায় হারিয়ে যায়? তাহলে আমরা কি সেটা দ্বারা ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি না?
এরকম যুক্তি দিয়ে প্যারানরমাল গবেষণার সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ দেন৷ গুগলে আইনস্টাইন এবং ভূতের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজলে ৮ মিলিয়নের ওপর আর্টিকেল বা তথ্য খুঁজে পাবেন।
এখন হয়তো আপনারা গভীর চিন্তায় পরে গেছেন! আসলেই তো আমরা মরলে শক্তিটা যায় কোথায়! আইনস্টাইন কী তাহলে আসলেই ভূত সম্পর্কে উচিত কথা বলে গেছেন? না থামেন। আপনি যদি পদার্থ বিজ্ঞানে নূন্যতম জ্ঞানটুকুও রাখেন তবে এই ধরণের প্রশ্ন মাথায় আসারই কথা নয়৷ কারণ এই প্রশ্নের উত্তরটাও কিন্তু খুব সোজা।
যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার শক্তি সেখানেই যায় যেখানে অন্যান্য প্রাণিরা মৃত্যুর পর যায়। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন পরিবেশ। আমাদের শরীরের শক্তি তাপ হিসেবে নির্গত হয়। যদি মৃত্যুর পর আমাদের মাটি চাপা বা পোড়ানো না হয় তাহলে বন্য প্রাণিরা আমাদের খেয়ে ফেলতে পারে। আর যদি মাটি চাপা দেওয়া হত সেক্ষেত্রে ব্যক্টেরিয়ার এবং অন্যান্য বিয়োজক কর্তৃক আমরা মাটিতে মিশে যাই এবং মাটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে ফিরে যায়৷ যেখানে উদ্ভিদ আমাদের পুষ্টি উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর উৎপাদ ও খাদকের মাধ্যমে এই চক্র চলতেই থাকে৷ অর্থাৎ আসলেই শক্তি কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হচ্ছে না কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে এর মাধ্যমে ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
যাক বাবা! তাহলে ভূত বলে কিছু নেই। মনে হঠাৎ করে একটা সাহস ফিরে এল। আজ বোধ হয় বেঁচেই যাবো! তারপর আস্তে আস্তে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সেরে এসে কাঁথা মুড়িয়ে দিলাম ঘুৃম, এক ঘুৃমেই রাত কাভার।