Home » বকুল, মল্লিকার গল্প

বকুল, মল্লিকার গল্প

রীনা পারভীন

মল্লিকা বৃষ্টিস্নাত দিনে গুচ্ছ গুচ্ছ কদমের শুভেচ্ছা তোকে। সারাটাদিন তোকে মনে পড়েছে অন্তর পুড়িয়ে। হয়তো বাটুন টিপলেই তোকে দেখতাম একঝলক কিংম্বা বর্ণে বর্ণে সাজাতাম শব্দমালা।
ঐ অক্ষর দোতনায় তুষানলে পুড়া হৃদয়ের ভার হয়তো কিছুটা লাঘব হত কিন্তু আজকাল তুষানলের ভার লাঘব থেকে বহন করাই যেন তৃপ্তিদায়ক। এতে মনে হয, যে আগুনে আমি পুড়েছি সে ছুঁয়ে আছে আমার অঙ্গ বসন হয়ে। যেন পাঁচ আঙ্গুলের স্পর্শেই তোকে পাই। হ্যাঁরে তোকে ঘিরেই আমার যত ভালোলাগা – মন্দলাগা।
যখন গুনগুনিয়ে গান করি, কবিতা পড়ি, আবৃত্তি করি তখন আষাঢ়ের নদীতে তরঙ্গ, তরাঙ্গিত হয় স্রোতস্বিনী ঝরনা হয়ে। আর যখন বিছানায় লেপ্টে থাকি চোখ বন্ধ করে তখন চোখের রেটিনা আবৃত করে থাকে ছিপছিপে মিষ্টি, তম্বি তটিনী মেয়েটি। যেকিনা আমাকে খুঁজেছিল এই শহরের অলি-গলি রাস্তায়। যার পরনে ছিল ধানপাতা রঙের চুরিদার আর অপেক্ষায় ছিল জাম, জামরুল, আম -কাঁঠালের বন মহুয়ায়।
যে বন বীথিকা সারিতে তুই দাঁড়িয়ে ছিলি ঋতুর পরিবর্তনে সে মৃত্তিকায় এখন জল থৈথৈ করে, আমি প্রত্যহ সকালে সে জল অবগাহন করি বেণু লতিকা ডানা এলিয়ে। নীল কলমিফুল তুলে কবরী মাঝে রাখি গুনগুনিয়ে স্বচ্ছ আয়নার পারদ ভেঙে তোকেই আবার দেখি আয়নার ওপাশে। “নীল চুড়ি, নীল শাড়িতে মানিয়েছে ভালো বলল্লি, তুই কোন শব্দ না করে”।
মল্লিকা, আজ তোকে একটি কথা বলি, আমার জীবনের একটি মধুময় দিনের স্মৃতি আছে। সেই দিনটির অপেক্ষায় আমি চেয়ে থাকি চাতকের মত।
বলনারে বকুল, কী সেই স্মৃতি? এত উৎগীরিব হোসনা, করোনার খবর -টবর কিছু রাখিসতো? আজ অথ্যাৎ ০৪/০৭/২১ তারিখে বাংলাদেশে মারা গেল ১১৫ জন। চারিদিকে দিন আনে, দিন খায় মানুষদের কষ্ট দেখে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সাট ডাউনে ওদের হয়েছে যত কষ্ট, যত জ্বালা। যাতের টাকা পয়সা আছে তারা ঘরের দরজা থেকেই সব কিনতে পারছে। আর ভালো -মন্দ রান্না করে খেযে শরীরে অতিরিক্ত মাংস নিয়ে টিভি সিরিয়াল দেখায় মত্ত আর পরচর্চা নিয়ে মশগুল। এই এক শ্রেণি, আর কিছু নাপারুক নিজেদের সন্তানদের জন্য সামান্য সময় ব্যয় করে বইয়ের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারে।
বকুল, করোনার খবরে এখন আর যেন
নতুন কিছু মনে হয়না! শুধু উপলব্ধিতে এতটুকুই আনতে পারি, এই দেড় বছরে করোনায় কত কাছে মানুষ, কত পরিচিত জন চলে গেল। এখন দিন গুনছি আমি, কবে ‘মা’ এসে ডেকে নিয়ে যাবে আমায়। এটি তুই কী বলিস! ” মা এসে ডেকে নিয়ে যাবে ” মল্লিকা, আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি মা আমার কাছে এসে গল্প করে কিন্ত থাকতে বলল্লে, বলে, “তুমি এখন থাক মা, আমি তোমায় এসে ডেকে নিয়ে যাব”। মৃত্যু সকলেই আছে, আমরা একদিন সকলেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। তুই, তোর মধুময় স্মৃতির কথা বল আগে,,,
ও আচ্ছা তুই এখনো ভুলিসনি তাহলে! একটা বছরের পাঁচ তারিখ আর আমার জন্ম তারিখ কাতালিও ভাবে একই দিনে পড়েছে। এখন কথা হলো প্রতি বছর বার মাসে পাঁচ তারিখ আসে। জুলাই মাসেও পাঁচ তারিখ আসে। তাহলে জুলাইয়ের পাঁচ তারিখ তোর প্রিয়? শুধু প্রিয় বলি কী করে সখি, বাংলার ঝিলের সব শাপলা শালুক স্বাগতম জানিয়েছিল সবটা পাপড়ি খুলে।
দোয়েল, কোয়েল, ফিঙে, শ্যামা নেচেছিল বেতাক বনে। ও চোখে চোখ পড়ার আগ পর্যন্ত লাল গোলাপ পাপড়ি ঝরে ঝরে পড়েছিল চেরীর থোকা থোকা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে, মোরগ ঝুটি, লাল কলাবতি ফুল নুয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল লজ্জা অবনত চোখে। নদীর ঢেউ সুরের দোলায় প্রতিধ্বনি তুলে স্বাগতম জানিয়েছিল, সাথে দল বেঁধে মাছেরা সাঁতার কেটে লীলানৃত্য প্রদর্শন করেছিল।
মল্লিকা তুই তো জানিস, বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়, প্রিয় চোখে, চোখ রাখবার সময় ভিতর -বাহিরে অবিরল
ধারায় বুকের জমিনে বৃষ্টি ঝরেছিল বন বীথিকা নিকুঞ্জ পথে। যেন ঐ নিকুঞ্জ বনবীথিকায় পানসি সাজিয়েছিল পেঁজা-তুলো মেঘেরা, আমার লজ্জাবনত লাল চিবুকে আঁখি মেলে ধরতেই পিউকাহা গেয়ে উঠলো। কামিনী, জুঁই, টগর, বেলী, মাধবি লতা
আমার সাথে শুনেছিল। বলেছিল, “সব ভালো তো”
জানিস মল্লিকা তিন শব্দের এই একটি মাত্র বাক্য রইলো আমার ভালে আর জীবনে হংসমিথুন হয়ে।

Related Posts

error: Content is protected !!