সাদা গোলাপ নিয়ে বসে আছি, আজকে ভালোবাসা দিবস তাই! সাদা গোলাপ দিয়ে কখনো কাউকে ভালবাসার কথা বলে নাকি, ভালোবাসার প্রতীক লাল, লাল গোলাপ হতে হবে! কেন সাদা গোলাপ দিয়ে করতে পারে না? পারে পাগলরা করে থাকে। আমাকে পাগল ভাবতেই পার। সত্যিই তুমি মস্ত বড় একটা পাগল। সেটা আমি জানি, আমি তো ঘুমানোর পর আমার নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলি, কখনো সপ্ন দেখি আমি এইদেশের রাজা, আবার কখনো নৈশী প্রহরী, মাঝেমধ্যে তো প্রচন্ড ভয় পাই। ঘুম ভেঙ্গে গেলে প্রচন্ড ক্ষুধার অনুভব করি। বলতে পার ইহা পাগলদের কাজকর্ম ছাড়া কিছুই না।
আরে সেদিনতো টেবিলের উপর থেকে বোতলটি পড়ে গেল, তখনো তিনটা বাজতে ১৭ মিনিট বাকি। সুনীলের নীরা সেদিন কান্না করছিল নীরার সেই মাছ কাটা বটিতে মাংশগুলো যেন সইছিল আচ্ছা তোমার কাছে হুমায়ূন স্যারের নীলপদ্ম থেওরীটা কেমন লাগে? কেন? আসলে আমার এখানে সন্দেহ আছে ,কেউ কারও প্রেমে পড়ল এবং পাঁচটি নীলপদ্ম কাউকে দিয়ে দিল,তাহলে তো কাছে আর থাকার কথা না, তাহলে তো আর প্রেমে পড়ার কথাও না, কারণ নীলপদ্মগুলো ফেরত নেওয়া যায় না। বোধ হয় দেওয়ার সময় একটা নীলপদ্ম দিয়েছিল; না হলে শুধু পাপড়ি দিয়েছিল। কেননা, আজকের ভালোবাসা জেনারেশন সেইরকম কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। টিক না? দেখ ব্যপারটা আপেক্ষিক। চল একটু ঐদিকে যায় ফারিয়া ….
মা, সাদা গোলাপ এর প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা আছে, তার মানে এই না যে সাদা রঙটিই আমার প্রিয়। সাদা টি শার্ট পছন্দ করতে পারি কিন্তু কখনোই আমি বাড়িতে সাদা রঙ করব না। তাহলে তোর প্রিয় রঙটিই কি? প্রিয় রঙ বলে আমার কাছে কিছু নেই, সাদা রঙটি মূলত সাতটি রঙের সমষ্টি। তাহলে তো তোর কোন উদ্দেশ্য আছে? দেখ আমি যদি বলি সিগারেট ক্ষতিকর ইহা কেউ গ্রহণ কর না, তাহলে আমার কথা কেউ শুনবে না। আমি যদি বলি ইভটিজিং করনা, সেটাও শুনবে না, যদি বলি তর্ক করনা , মারামারি হবে, তাহলে সেটাও শুনবে না। কিন্তু আমার ইচ্ছে থাকতে পারে, আমি শান্তি কামনা করতেই পারি ।ও তাই শান্তির প্রতীক সাদা, তাই তোর সাদা গোলাপই বেছে নিতে হবে? সাদা রঙটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেমন সমস্ত রঙগুলো প্রয়োজন হয়েছে, তেমনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য দরকার সমস্ত সমস্যার সমাধান। ইসলাম ধর্মই একমাত্র শান্তির ধর্ম ইহা আকড়ে ধরতেই হবে। সবাই টাকা উপার্জন করতে পারে না,কিছু মানুষদের জন্য ইহা। আবার সবাই ঐ রেললাইনের পাশে শুয়ে থাকা মানুষদের নিয়ে চিন্তা করে না।এগুলো কিছু মানুষই করে থাকে। আচ্ছা আমাদের বাড়ির পাশে ঐ কবরগুলো কার? তা টিক করে কেউ বলতে পারবে?না, কিন্তু কেন? এখানে কিছু মানুষের কবর আছে, সেটা আমরা জানি, নতুন প্রজন্ম এখনই এইটা অবহেলা করে আমার মনে হয় ১০১ বছর পর ইহা কেউ মনে রাখবে না। ধরে নেও; এখানে একটা কয়লা খনি পাওয়া গেল, যেটা এই মানুষগুলোরই পঁচা মাংশ হাড় দিয়ে গঠিত। আমাদের ছেলেমেয়েরা সেটা নিয়ে এসে পুড়াবে,তারা জানবে না, তাদের পূর্ব পুরুষদের তারাই পুড়াচ্ছে? কি অদ্ভুত লাগছে তাই না!
আমার থেকে বাহাত্তর ফিট দূরে একটি সাদা স্কার্ফ পড়া মেয়ে দাড়িয়ে, সে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে, পিপীলিকার মত ছোট ছোট পায়ে, তার হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। আমার মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে আমি বহুদিন ধরে চিনি, মেয়েটার সাথে তাল মিলিয়ে অনেকক্ষণ চলছি, রাস্তার উপর একটি কুকুর মরে আছে, কুকুরটার উপর দিয়ে ইট ভর্তি ট্রাক গুলো চলে যাচ্ছে। অনেকেই নাক ধরছে, কেউবা থুতু ফেলছে, কিন্তু এই মেয়েটা কিছুই করছে না। প্রশ্ন করতেই বলে উঠল ,কর্তৃপক্ষ আসবে কুকুরটা সরিয়ে দিবে, গভীর রাত হবে তারপর দেখা যাবে এই রাস্তার উপর বিবেক ঘুমিয়ে পড়েছে। কি অদ্ভুত তাই না? বুঝতে পারলাম রাস্তার উপর থুতু ফেলা যাবে না,গভীররাতে এখানে কেউ ঘুমিয়ে থাকে। তুমি আমাকে চিনতে পার নাই, হ্যাঁ ফেরেছি, তুমি ফারিয়া। দেখছ চারপাশে কেমন জনমানব শূন। মুখটা নিচু করে মুচকি একটা হাসি দিয়ে হ্যাঁ; না শূন্য এখানে মানে হৃদয়ে ও তাই। এই বলে বুকের মধ্য আলতু করে ঠাঁই করে নিলো সাদা গোলাপ গুলো ।
লেখক: মোহাম্মাদ মোখলেছুর রহমান
কন্ঠ: এলিজা পারভীন আলো