Home » বুকের ভিতর ব্যাথা

বুকের ভিতর ব্যাথা

মোঃ মাইদুল সরকার, চট্টগ্রাম

বাহিরে দু’একটা কাঠাল পাতা ঝড়ে পড়তেছে, সেদিকে হামিদা বানুর দেখার অবকাশ নেই। সে এক মনে বই পড়ছে। পড়তে তার ভাল লাগে। আজ একটা উপন্যাস নিয়া বসেছে, কাহিনিটা দারুণ। শরতের এই অপরাহ্নে তার তাড়া আছে। বিকাল ০৫.০০ টায় টিউশনিতে হাজির হতে হবে। যথা সময়ের ছাত্রীর বাসায় না গেলে, ছাত্রীর মায়ের মুখের যেন শ্রাবনের আকাশ হয়ে উঠে। সহসা তাকানো যায় না।

উঠি উঠি করেও তার উঠা হচ্ছিলনা। শেষ পর্যন্ত বই রেখে তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে যেতে হল।
হামিদা বেড়িয়ে যাবার পর তার মা-বাবা দু’জনে বসে আলাপ করছেন-
মা- মেয়েটা সংসারের জন্য এত খাটে, নিজের শরীরের যত্নই নিতারেনা। জানিনা মাইয়াডার কপালে কী আছে ?

বাবা-যতগুলান বিয়ার কাজ আইছে, সবগুলাই একটা একটা কইরা পাশ কাইটা গেল। কি নাই আমার মাইয়ার-লেহায়, পড়ায়, কামে কাইজে তিরোন্তাজ ।
মা- মাইনষে কান ভাঙ্গানি দেয়, খুছি কয়। কেমনে বিয়া অইবো।
বাবা- অর ছাত্রী পড়ান খেমা দিতে অইব। নানান জনে নানান কথা কয়।
মা- ছাত্রী না পড়াইলে সংসারঠা চলব কেমনে ? আপনে-আমি দু’জনেই অসুইক্কা মানুষ। খরচের নাই আহাল।ছোড মাইয়াডা কলেজে ভর্তি হইছে, হের খরচ। চিন্তা ভাবনায় জীবনডা শেষ হইয়া গেল।

ফারহানা বানু তার বাপ-মার কথা আড়াল থেকে সবই শুনেছে।
সে সামনে এসে বলল-তোমগো দুইজনের আর খাইয়া কাম নাই, খালি যহন তহন বুবুর বিয়ার কথা তুইলা বও আর মন মড়া হইয়া থাহ।
ভাল লাগেনা আর।

আমার বান্ধবী একটা বিয়ার কাজ আনছে, পোলা বিদেশ থাহে, বিদেশেরতেনে আইছে এহন বিয়া করবো। বিয়ার পরে আবার বিদেশ চইলা যাইবো। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ-সুবিধা করতারে তয় বউরেও বিদেশ লইয়া যাইবো। তোমরা ভাইবা চিন্তা কও আমি বান্ধবিরে জানাই। দেহি এইবার ভাগ্যে কি আছে ?

হামাদার বাবা-মা শলা পরামর্শ কইরা জানাল তারা রাজি। রাজি না হইয়া উপায় আছে মাইয়ার বয়স বাইরা যাইতাছে, মানুষের মন্দ কথা আর শুনতে মন চায়না।
ফারহানা তার বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে সব জানালো। তারা রাজি। ছেলে পক্ষের লোকজন আইসা হামিদারে দেইখা গেল।

হামিদার বাপও ছেলের বাড়ি গিয়ে সব দেখে শুনে এলো। বিয়ার দিন-ক্ষণ ঠিক হলো।
এদিকে আবিদের কাছে হামিদার চেয়ে ফারহানারে বেশি ভাললাগে। সে একদিন ফারহানার বান্ধবীকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে ফারহানার সাথে কথা বলেছে।
আবিদ-ফারহানা আমি তোমারেই ১ম দেখেছি, তোমার বড় বইনরে দেখছি পরে। তোমারেই আমার মনে ধরছে। তুমি যদি রাজি থাহ তোমার বড় বইনের বিয়া অইলে আমি তোমারে বিয়া করমু।
ফারহানা- আবিদ ভাই, জান থাকতে আমার বইনের আগে আমি বিয়া বমু না। আমার সোনার প্রতীমা বইন সংসারের লইগা সারাডা জীবন খাটা খাটনী করছে। হের লাইগা বাপ-মার ঘুম নাই। আপনে হেরে বিয়া করলে সুখী হইবেন।

আবিদ- তুমি যদি রাজি না হও তাইলে আর করার কিছু নাই, কথা যখন হইছে তয় হামিদারেই বিয়া করুম।
সেদিনের পর থেকে ফারহানার মনেও কেন যেন বার বার আবিদের মুখ খানা উঁকি দেয়। তার কোন কাজে মন বসেনা। সে এর কারণ বুঝতে পারেনা। এক রাতে স্বপ্নেও আবিদ এসে হাজির, আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল ফারহানার। এসব কি হচ্ছে ? মনে মনে বলল সে। নিজেই নিজের উপর রাগ হল।

আবিদ আর হামিদার বিয়ে হয়ে গেল। সুখেই দিন যেতে লাগলো কিন্তু হামিদা ও আবিদ বেড়াতে এলে আবিদের সাথে ফারহানার দেখা হলেই সে কেমন যেন হয়ে যায়। দিন দিন আবিদেরে আরো কাছ থেকে দেখে তার প্রতি ফারহানা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু সে তা প্রকাশ করেনা। আবিদের চোখ বু্ঝে যায় ফারহানা তার উপর আসক্ত। এভাবেতো দিন চলতে পারেনা। আবিদ বিদেশ যাবে আরো ছয় মাস পড়ে। এতদিন কেমনে সে থাকবে, যদি বুবু জেনে যায় তবে সে আত্মঘাতী হবে নির্ঘাত।

এক রাতে ছোট্ট একটা চিঠি লিখে ফারহানা ঘড় থেকে বেড়িয়ে গেল। হামিদা তখন বাপের বাড়ি। সকালে তার বিছানা গুছাতে গিয়ে বালিশের নীচে পেল এই চিঠি।

প্রিয় বুবু,
আমাগো লাইগা তুই সারাটা জীবন কষ্ট করছস। এখন তোর সুখের দিন আইছে। তোর এই সুখ চিরকাল থাক। মানুষের জীবনে হঠাৎ কইরা কি ঘইটা যায় বলা যায়না। আমার মনের ভিতর কি হইতাছে তা আমি কাউরে বলতে পারুমনা। তুই ভাল থাকিস। বাপ মারে দেইখা রাখিস। আমারে খুঁজিসনা, চিরদিনের লইগা দূরে চইলা গেলাম।

ইতি
ফারহানা।

হামিদা চিঠি পইড়া কাইন্দা বুক ভাসাইলো। তার বাপ-মা ছোট মাইয়ার শোকে পাগলের মত হইয়া গেল। এর পর থাইকা যতবারই ফারহানার কথা তার মনে পড়ে- বুকের ভিতর ব্যাথাটা মোচড় দিয়া উঠে।

Related Posts

error: Content is protected !!